আপনি যদি বেনারসি শাড়ি চেনার উপায় না জেনে থাকেন তাহলে শাড়ি কিনে ঠকার সম্ভাবনা ১০০%। বেনারসি, নামেই আভিজাত্য। বিয়ে বাড়িতে কনের প্রথম পছন্দ এই বেনারসি। বিয়ে ছাড়াও যে কোন জমকালো অনুষ্ঠানে শাড়ি হিসেবে বেনারসির তুলনা নেই। আর তাই শাড়ি পছন্দ করে যেসব নারী তাদের পছন্দে বেনারসি সব সময়ই শীর্ষে। (বেনারসি শাড়ি চেনার উপায়)
বেনারসি শাড়ি |
সুদূর প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান , বেনারসির চাহিদা কমেনি একটুও। এর উজ্জ্বল রঙ , বাহারি কারুকাজ মানুষের মন কাড়ে বেশি। আনন্দঘন মূহুর্ত যেন আরো একটু বেশি আনন্দঘন হয়ে উঠে বেনারসির বাহারে।
তবে সুন্দর এই শাড়িটি কেনার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নয়তো এতো প্রিয় শাড়িটি কিনার সময় ঠকার সম্ভাবনা থাকে। আজ আমরা জানব আসল বেনারসি শাড়ি চেনার কিছু উপায়। চলুন জেনে নেই, বেনারসি শাড়ি চেনার উপায়। (বেনারসি শাড়ি কিভাবে চিনব)
বেনারসি শাড়ির ইতিহাস
বেনারসি শাড়ির মূল উৎপত্তি ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের বেনারস শহরে। তবে, ঠিক কখন থেকে এ শাড়ি তৈরি হয়ে আসছে তা জানা যায় নি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কারণে অনেক বেনারসি তাঁতি সম্প্রদায় এদেশে এসে, ঢাকার বসতি স্থাপন করে। আর স্বাধীনতার পর এসব তাঁতিরা সবাই মিরপুর এলাকায় বসতি গড়ে তোলে।
ধীরে ধীরে বাংলার লোকেরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাতিঁরা এর কাজ শুরু করেন। যুগে যুগে এর নকশায় এসেছে ভিন্নতা। বেনারসি শাড়ির পরিবর্তে এর নাম হয় কাতান।
বেনারসি শাড়ি চেনার উপায়
1. আসল বেনারসি শাড়িতে আচঁলে সবসময় ছয় ইঞ্চি থেকে আট ইঞ্চি মাপের লম্বা সমান সিল্কের প্যাচ থাকে কিন্তু নকল বেনারসি শাড়িতে এই প্যাচ থাকে না। শাড়ি পরিধান করার সময় এই অংশটি কাধেঁর উপর দিয়ে পড়ে তাই এটি খুব সহজেই লক্ষ্য করা যায়।
2. একটি আসল বেনারসি শাড়িতে মোঘল মোটিফ থাকবে যেমন আমরু, আমবি, দোমাক , বিভিন্ন ফুলের নকশা কিন্তু নকল বেনারসি শাড়িতে এই মোটিফ থাকবে না।
3. বেনারসি শাড়ি চেনার জন্য খুব বেশি দক্ষতার দরকার পড়ে না। শাড়িটিকে উল্টে দেখলেই হবে। আসল বেনারসি শাড়ির উল্টা পাশে ঘন সুতা দেখা যায় যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে থাকে না। নকল বেনারসি শাড়ির উল্টা পাশ খসখসে হয়ে থাকে।
4. খাঁটি সিল্ক চেনার জন্য আরেকটি পরীক্ষা করা যায়। সিল্ক কে আগুনে পোড়ালে চুল পোড়া গন্ধ বের হয়। আর এর ছাই হয় কালো এবং ধরার সাথে সাথে গুড়া হয়ে যাবে।
5. শাড়ি আসল নাকি নকল তা বুঝার জন্য রিং টেস্ট করা যায়। খাঁটি সিল্কের শাড়ি একটি আংটির ভিতর দিয়ে খুব সহজেই প্রবেশ করে থাকে। অন্যদিকে নকল শাড়িতে এই কাজটি সম্ভব হয় না।
6. একটি আসল বেনারসি শাড়ি সব সময় খুব উন্নতমানের সিল্ক সুতা ও জরি সুতা দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এই জরি সুতা সোনালি রঙ বা রুপালি রঙের হয়ে থাকে। এই সব সুতা খুব দামি হয়ে থাকে তাই শাড়ির দাম ও খুব বেশি হয়। একটি খাঁটি বেনারসি শাড়ি তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। একজন তাতিঁ একটি বেনারসি তৈরি করতে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় নিয়ে থাকেন।
এই সমস্ত কারণে একটি আসল বেনারসি শাড়ি খুব দামি হয়ে থাকে। অন্য দিকে মেশিনে বোনা বেনারসি শাড়িতে এসব কিছুই থাকে না তাই সেটা অনেক কম দামে পাওয়া যায়। সিনথেটিক কাতান একটি শাড়ি যেমন পাওয়া যাবে ১৫০০ টাকা আবার কিছু কিছু শাড়ির দাম ৫০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার বিয়ের জন্য শাড়ি তৈরি করলে ওড়না সহ সেগুলোর দাম কয়েক লাখ পর্যন্ত হতে পারে।
7. বেনারসি শাড়ি সাধারনত সিল্ক সুতা দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। তাই শাড়ি কেনার আগে সুতা আসল সিল্কের কিনা সেটা যাচাই করতে হবে। শাড়িটি হাতে নিয়ে ঘসা দিতে হবে। যদি তাতে গরম অনুভূত হয় তাহলে সেটা আসল সিল্ক।
বেনারসি শাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কি খেয়াল রাখা উচিত?
- বেনারসি শাড়ি চিনার জন্য শাড়িটি উলটে দেখলেই হবে। কেননা আসল বেনারসি শাড়ির উল্টা পাশে ঘন সুতা দেখা যায়, যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে দেখা জায়না।
- আসল বেনারসি শাড়ির আচলে সবসময় ৬-৮ ইঞ্চি মাপের লম্বা সমান সিল্কের প্যাচ থাকে, যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে থাকে না। শাড়ি পড়ার পর এই অংশটি কাঁধের উপর দিয়ে পড়ে, তাই এটি খুব সহজেই দেখা যায়।
- বেনারসি শাড়ি সবসময় খুব উন্নতমানের জরি সুতা ও সিল্ক সুতা দিয়ে তিরি করা হয়। এই জরি সুতা সোনালি বা রুপালি রঙের হয়ে থাকে। এই সব সুতা খুব দামি হয় তাই এসব শাড়িও খুব দামি হয়।আর এসব শাড়ি তৈরি করতে একজন তাঁতির ১ সপ্তাহ থেকে ১ মাস সময় লেগে থাকে।
- বেনারসি শাড়ি সাধারনত সিল্ক এর সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়। তাই কিনার আগে দেখতে হবে সুতাটি আসল সিল্ক কিনা সেটা যাচাই করতে হবে। শাড়িটি হাতে নিয়ে ঘষা দিয়ে দেখতে হবে তাতে গরম অনুভব হয় কিনা।তাহলে বুঝা যাবে আসল বেনারসি শাড়ি।
- আসল শাড়ি বুঝার জন্য রিং টেস্ট করা যেতে পারে। খাটি সিল্ক এর শাড়ি খুব সহজেই একটি আংটির ভিতর দিয়ে প্রবেশ করা যায়।যেটা নকল শাড়িতে সম্ভব নয়।
- আসল বেনারসি শারিতে মোঘল মোটিফ থাকবে,যেমন আম্রু, আমবি,দোমাক যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে থাকবে না।
- খাটি সিল্ক চেনার জন্য সিল্ক কে আগুনে পুড়িয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। আগুনে পড়ালে কাপড় থেকে চুল পোড়া গন্ধ বের হবে। আর এর ছাই হবে কালো এবং ধরার সাথে সাথে গুড়া হয়ে যাবে।
আপনি এবং অবশ্যই আপনি
শাড়িটা তো আর কোন তিনতালার দাসবাবুর মেয়ে পরবে না।পরবেনতো আপনি। তাই আপনার ভালো লাগাটা প্রথমে দেখবেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠাণ্ডা মাথায় দেখুন। কি দেখছেন আয়নায়? আপনাকে লম্বা ও ছিপছিপে দেখা যাচ্ছে ? তাহলে চোখ বুজে চওড়া পার,জমকালো, বড় ডিজাইন এবং ব্রাইট রঙের বেনারসি কিনুন। আর যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ আপনি উচ্চতা যদি কম হয় এবং চেহারা যদি গোলগাল হয় তাহলে হাল্কা রঙের সরু পারের লম্বালম্বি ডিজাইনের বেনারসি কিনুন।
মনে রাখবেন শাড়ি পরবেন আপনি, তাই আপনার কাছে আপনাকে যেভাবে ভাল লাগে এবং যেই শাড়িটি পছন্দ হয় সেই শাড়িটিই কিনবেন।
See More: U দিয়ে মেহেদি ডিজাইন এর ছবি ও ডিজাইন
আপনার গায়ের রঙ
বেনারসি শাড়ি চেনার উপায় |
আপনার রঙ যদি ফ্যাকাসে হয় তাহলে সফট সোনালি, গোলাপি,হলুদ ও পিচের হাল্কা শেড পরতে পারেন। আর যদি ফর্সা হয় তাহলেতো কথাই নাই যে কোনও উজ্জ্বল রঙ যেমন লাল, হলুদ ও নীল এ আপনাকে দিব্যি মানাবে।
আর যদি শ্যামবর্ণ বা জলপাইয়ের মতো গায়ের রঙ হয় তাহলে একটু মেটালিক শেড বা ব্রিক রেডের মতো ঘন রঙ বেছে নিতে পারেন। আর যে বেনারসি পছন্দ হবে সেটা দিনের বেলা দেখে এলেও রাতেও একবার দোকানে গিয়ে দেখে আসবেন। কেননা অনেক সময় চড়া আলোর বিচ্ছুরণে রঙ পাল্টে যায়।
বাজেট বুঝুন
বেনারসি শাড়ি কেনার আগে প্রথমেই যেটা মাথায় রাখতে হবে সেটি হচ্ছে বাজেট। অর্থাৎ বেনারসির জন্য কত টাকা বরাদ্দ করেছেন। ১টা অরিজিনাল বেনারসি শাড়ি পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকার বেনারসি পাওয়া যায় বাজারে। তাই নিজের পকেট বুঝে তবেই শাড়ি কিনবেন। কেননা বেনারসি আলমারিতে ঢুকলে সহজে বেরোয় না। আর যদি আপনি নিজে চাকুরে হন তবে মনের খুশিতে লাখ টাকার শাড়ি কিনতে পারেন।
বেনারসি শাড়িতে রঙের বৈচিত্র্য
বেনারসি শাড়িতে রঙের বৈচিত্র্যের অভাব নেই। বিয়ের কনেকে লাল বেনারসিতেই সবাই কল্পনা করে থাকে। তবে, লাল ছাড়াও মেজেন্টা, মেরুন, হলুদ, বেগুনি, খয়েরি ইত্যাদি রঙের উপর সোনালি ও রুপালি জরি সুতার জমকালো ও ভারি কাজ থাকে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজকাল আরো অনেক রঙের বেনারসি বের হয়েছে।
বেনারসি শাড়ির শুরুর দিকে ডিজাইন গুলো ছিল পার্সিয়ান মোটিফ। তারপর এতে আসে মোঘল মোটিফ। সময়ের সাথে সাথে এতে যুক্ত হয় পাবনার কিছু তাতিঁদের মোটিফ। আস্তে আস্তে এতে স্থানীয় কিছু নকশাও যুক্ত হয়।
বেনারসি শাড়ির তৈরি পদ্ধতি
বেনারসি শাড়ি চেনার উপায় |
বেনারসি তৈরি করেন তাতিঁরা তাতঁ যন্ত্রের সাহায্যে। এই শাড়ি যেমন জমকালো তেমনি এর তৈরি প্রক্রিয়া ও বেশ জটিল। এর মূল উপাদান হলে কাঁচা রেশমি সুতা। পাশাপাশি এতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে জরি সুতা। শাড়ি তৈরি করার জন্য প্রথমে নকশা অনুযায়ী সুতা রং করা হয়ে থাকে। এরপর এই সুতা সাবান ও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে হয়।
এরপর এই সুতা একত্রীকরণ করার জন্য পাঠানো হয় কারখানায়। এই সুতা দিয়েই চলে শাড়ি বুননের কাজ। শাড়ির ডিজাইন ও বুনন প্রক্রিয়া অনুযায়ী শাড়ি তৈরিতে সময় লাগে। মোটামুটি সহজ বুনন ও ডিজাইনের একটি শাড়ি তৈরিতে একজন তাতিঁর সময় লাগে প্রায় ৭ দিন।
আবার খুব বেশি কঠিন কাজ ও নিখুঁত বুননের জন্য তিনজন তাতিঁর সময় লাগে প্রায় তিন মাস। শাড়ি তৈরি করার পর একে পলিশ করা হয়ে থাকে। অনেক সময় তাতিঁরা দেশি রেশমি সুতার পরিবর্তে, চায়না সিল্ক সুতা ব্যবহার করে থাকেন।
বেনারসি শাড়ির যত্ন
বহুল আকাঙ্খিত ও দামি এই শাড়িটি কেনার পর এর যত্ন নিতে হবে খুব ভালো ভাবে। এত জমকালো নকশা ও ডিজাইন এর শাড়িটির যত্নে ও রয়েছে ভিন্নতা। বেনারসি শাড়ি সবসময় ড্রাই ওয়াশ করতে হবে। পানি বা ডিটারজেন্ট দিয়ে কখনোই এটি ধোয়া যাবে না। (বেনারসি শাড়ি চেনার উপায়)
আবার, শাড়িটিতে যদি কোন ভাবে দাগ লেগে যায়, তখন ওই স্থানে পানি দিয়ে ঘষা যাবে না। এতে শাড়ির ক্ষতি হতে পারে। তাই, এই দাগ তোলার জন্য প্রথমে অল্প পরিমানে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। তারপর সেখানে নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহার করতে হবে। তারপর সেই স্থানটি টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে হবে।
বেনারসি শাড়ির পরিশেষে
বেনারসি শাড়ি চেনার উপায় জানা থাকা অনেক জরুরি। এত দাম দিয়ে একটি বেনারসি শাড়ি কেনার সময়, অবশ্যই এটি আসল নাকি নকল তা যাচাই করে নিতে হবে। তাহলে, দাম দিয়ে কেনা পছন্দের শাড়িটি কিনে, ঠকার সম্ভাবনা থাকবে না। উপরোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করলে, আসল বেনারসি শাড়ি খুব সহজেই চেনা যাবে।
See More: 30+ কানের টপ ছবি 2022
0 মন্তব্যসমূহ